
ভারত থেকে প্রবল বেগে ধেয়ে আসা পানির তোড়ে বগুড়ায় ভয়াবহ বন্যার আশংকা দেখা দিয়েছে। দু'দিনে ১০০ সেন্টিমিটারেরও বেশি পানি বেড়েছে। সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত যমুনা নদীর সারিয়াকান্দি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল, যা এযাবতকালের সর্বোচ্চ। পানি আরো বাড়তে পারে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র আভাস দিয়েছে। বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করায় মোট ৭৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ভারত গজল ডোবা বাঁধের সবগুলো গেট খুলে দেয়ার পরই যমুনার পানি অস্বাভাবিক গতিতে বাড়ছে। শনিবার সন্ধ্যার পর হু হু করে পানি বাড়তে থাকে। অতিরিক্ত পানির চাপে সারিয়াকান্দি উপজেলার চন্দনবাইশায় পুরাতন বাঁধে ভাঙ্গন ধরেছে। এছাড়াও চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের মানিকদাইড় চরে স্রোতের গতি বৃদ্ধির ফলে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পানিতে সারিয়াকান্দি উপজেলায় ৯টি, ধুনট ও সোনাতলায় ৪টি ইউনিয়নের ৫০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।
জেলা ত্রাণ অফিস জানিয়েছে, দ্বিতীয় দফার বন্যায় জেলার সারিয়াকান্দি, ধুনট এবং সোনাতলা উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ১৫ হাজার ৪৫৫ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত শুধু সারিয়াকান্দিতে ত্রাণের চাল দেয়া হয়েছে ৫০ টন এবং নগদ টাকা ১ লাখ টাকা। তবে ধুনট, সোনাতলায় কোন বরাদ্দ দেয়া হয়নি।
জেলা ত্রাণ অফিস জানিয়েছে, দ্বিতীয় দফার বন্যায় জেলার সারিয়াকান্দি, ধুনট এবং সোনাতলা উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ১৫ হাজার ৪৫৫ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত শুধু সারিয়াকান্দিতে ত্রাণের চাল দেয়া হয়েছে ৫০ টন এবং নগদ টাকা ১ লাখ টাকা। তবে ধুনট, সোনাতলায় কোন বরাদ্দ দেয়া হয়নি।
সারিয়াকান্দি উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ইউনিয়নগুলো হলো কাজলা, চালুয়াবাড়ী, চন্দনবাইশা, কর্ণিভাড়ী, বোহাইল ও হাটশেরপুর। এসব এলাকার জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী মজুদ আছে বলে তিনি জানান।
এদিকে, প্রথম দফা বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই দ্বিতীয় দফা বন্যার আশংকায় নদীপাড়ের মানুষের মাঝে আতংক দেখা দিয়েছে। বাঁধে আশ্রয় যেসব পরিবার তাদের বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছিলেন তারা আবারও বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে আসতে শুরু করেছেন।
প্রথম দফা বন্যার ধকল কাটিয়ে ওঠার আগেই আবারো বন্যার পানি ধেয়ে আসায় আতংকিত হয়ে পড়েছে যমুনাপাড়ের মানুষ। বন্যার্তরা ঘরবাড়ি ছেড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয়ের জন্য ছুটছে।
ক্রমান্বয়ে বগুড়ার তিন উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি নতুন করে ভয়াবহ রূপ নিতে শুরু করেছে। প্রতিমুহূর্তে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। নদীগর্ভে ঘরবাড়ি হারিয়ে বাস্তুহারা হয়ে পড়ছে যমুনাতীরবাসী। সারিয়াকান্দি উপজেলার কুতুবপুর, কামালপুর, কাজলা, চন্দনবাইশা ও কর্ণিবাড়ি, সোনাতলা উপজেলার মধুপুর, তেকানি চুকাইনগর, পাকুল্লা, ধুনটের ভান্ডারবাড়ী, গোসাইবাড়ী ইউনিয়ন বন্যা-কবলিত এলাকায় পরিণত হয়েছে। তিন উপজেলার এসব ইউনিয়নগুলোতে ইতোমধ্যেই পানি প্রবেশ করেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন করে নিম্নাঞ্চলগুলোর লোকালায়ে পানি প্রবেশ করছে। এতে গৃহহারার সংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব এলাকার বানভাসী মানুষ থাকার জায়গা না পাওয়ার পাশাপশি খাদ্য, বিশুদ্ধপানি এবং তীব্র জ্বালানি সংকটে দিন পার করছে। সামান্য ত্রাণ সামগ্রী এসব এলাকায় দিলেও বেশির ভাগ মানুষের ঘরে পৌছেনি ত্রাণের প্যাকেট।
বগুড়া কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, দ্বিতীয় দফা বন্যায় ফসলের ব্যপক ক্ষতির আশংকা আছে। ইতোমধ্যেই এই অঞ্চলের ৪ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে তলে গেছে। উল্লেখযোগ্য ফসলের মধ্যে আউস ৭১৫, আমন বীজতলা ২০, রোপা আমন ৩৯৭২, শাকসবজি ১২৮ হেক্টর।
এদিকে পানির চাপে যমুনানদীর বাঁধ রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। এলাকাবাসী সংশয় প্রকাশ করে জানা গেছে, তারা বাঁধ ভাঙ্গার আশংকায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
এদিকে পানির চাপে যমুনানদীর বাঁধ রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। এলাকাবাসী সংশয় প্রকাশ করে জানা গেছে, তারা বাঁধ ভাঙ্গার আশংকায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী রুহুল আমিন জানান, আগামী তিন দিন পানি বৃদ্ধি হতে পারে। তবে বৃদ্ধির হার কমে আসবে। তিনি আরো জানান, পানি বাড়লেও বাঁধ এখন পর্যন্ত ঝুঁকিমুক্ত আছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসেন আলী জানান, ইতোমধ্যেই তিন উপজেলায় মোট ৭৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এ কারণে সারিয়াকান্দিতে ৫৪টি, সোনাতলায় ১৪টি এবং ধুনটে ৫টি বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসেন আলী জানান, ইতোমধ্যেই তিন উপজেলায় মোট ৭৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এ কারণে সারিয়াকান্দিতে ৫৪টি, সোনাতলায় ১৪টি এবং ধুনটে ৫টি বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।