
হজযাত্রা
হজযাত্রায় অব্যবস্থাপনা কাটিয়ে ওঠার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। দেশ থেকে সব হজযাত্রীর যেমন সৌদিতে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, তেমনি সৌদি আরবে গিয়েও প্রায় ১০ হাজার হজযাত্রীর বিপাকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। হজ এজেন্সিগুলো সৌদির নির্ধারিত মোয়াল্লেম ফি সম্পূর্ণভাবে পরিশোধ না করায় এ অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, গত বছর সৌদিতে সর্বনি¤œ মোয়াল্লেম ফি ছিল ৭২০ রিয়াল। কিন্তু এ বছর এটি দ্বিগুণ করে এক হাজার ৫০০ রিয়াল করা হয়েছে। এ নিয়ে বেশ সমস্যা দেখা দেয়। ৯১টি এজেন্সির ১৪ হাজার হজযাত্রীর ক্ষেত্রে এ জটিলতা সৃষ্টি হয়। তখন সরকারের মধ্যস্থতায় কিস্তিতে এ টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়। প্রাথমিকভাবে এক হাজার রিয়াল দিয়ে সৌদির হজ এজেন্সিগুলোর সাথে চুক্তি করে দেশের বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো। বাকি থাকে ৫০০ রিয়াল।
বেসরকারি এজেন্সি সূত্রে জানা যায়, এ বছর মোয়াল্লেম ফি বেড়েছে ৭৮০ রিয়াল। এতে ২২ দশমিক ২০ টাকা হারে বাংলাদেশী টাকায় হাজী প্রতি খরচ বেড়েছে ১৭ হাজার ৩১৬ টাকা। যে এজেন্সির ৩০০ হজযাত্রী রয়েছে তার অতিরিক্ত খরচ হবে ৫১ লাখ ৩৪ হাজার ৮০০ টাকা। বেসরকারি এজেন্সিগুলো এ অতিরিক্ত টাকা খরচের কারণে ঘর ভাড়া করেছে অনেক দূরে। এতে হাজীরা বেশ বিড়ম্বনার শিকার হবেন। একইভাবে প্রাথমিকভাবে অন্য হাজীদের স্বার্থে তখন চুক্তি করলেও বেশির ভাগ এজেন্সিই আর বাকি থাকা ৫০০ রিয়াল (১১,১০০ টাকা) পরিশোধে ইচ্ছুক নয়। এতে চরম জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, বাকি থাকা এ টাকা পরিশোধ না করলে মোয়াল্লেমরা হাজীদের জন্য গাড়ি, মিনা ও আরাফাতের ময়দানের জন্য তাঁবু কার্ডসহ অন্যান্য সুবিধা প্রধান করবেন না, তখন ওই সব হজযাত্রী হজ পালন করতে পারবেন না। বেসরকারি হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ হাজী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের বলেন, ৯১টি এজেন্সির ১৪ হাজার হজযাত্রীর জন্য মোয়াল্লেম ফি নিয়ে সমস্যা হয়েছিল।
বেসরকারি এজেন্সিগুলো তখন এক হাজার টাকা দিয়ে চুক্তি সম্পন্ন করলেও এর মধ্যে চার হাজার হাজীর ক্ষেত্রে বাকি থাকা ৫০০ রিয়াল পরিশোধ করা হতে পারে। বাকি ১০ হাজার হজযাত্রীর ক্ষেত্রে এ টাকা এজেন্সিগুলো পরিশোধ করতে না পারার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মোয়াল্লেম ফি পরিশোধ না করায় এসব ব্যক্তি সৌদি আরবে গিয়েও হজ করতে পারবেন না।
অর্ধেকেরও বেশি হজযাত্রী এখনো সৌদি যেতে পারেননি : চলতি বছর হজযাত্রীর কোটা এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮। হজ ফ্লাইটের মোট ৩৬ দিনের মধ্যে ইতোমধ্যে ২১ দিন পার হয়েছে। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত সৌদিতে হাজী গেছেন মাত্র ৬৩ হাজার ৮৬ জন। আগামী ২৮ আগস্ট পর্যন্ত হজ ফ্লাইট রয়েছে। অর্থাৎ বাকি ১৫ দিনে আরো ৬৪ হাজার ১১২ জন হজযাত্রীকে সৌদি আরবে যেতে হবে যা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। এ দিকে গতকাল সকাল পর্যন্ত ভিসা পেয়েছেন এক লাখ তিন হাজার ৩৭৯ জন। এখনো ভিসা পাননি ২৩ হাজার ৮১৯ জন। ভিসার আবেদন করা যাবে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত।
অর্থাৎ আর মাত্র চার দিন বাকি আছে। কিন্তু এখনো ভিসার আবেদনই করেননি ১৪ হাজার ৬৯৯ জন। ফলে এখান থেকেও অনেকে যথাসময়ে ভিসা করতে পারবেন না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, হজ ফ্লাইট শুরুর পর থেকে ভিসা জটিলতায় ও হজ যাত্রীদের বাড়িভাড়াসংক্রান্ত কারণে প্রায় ২৫টি হজ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। নিয়ম অনুসারে হজযাত্রীদের ফ্লাইটের আগেই সৌদি আরবে বাড়িভাড়া করে ভাড়ার রসিদ ও বিমানের টিকিট নিশ্চিত করে হজ অফিস থেকে ডিও লেটার নিতে হয়। কিন্তু মোয়াল্লেম ফি ও বাড়িভাড়া অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক এজেন্সি এখন পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া করেননি। শেষ দিকে এসে চেষ্টা করলে কম টাকায় বাড়ি ভাড়া করা যাবে, এমন আশায় বসেছিলেন অধিকাংশ এজেন্সি মালিক। যে কারণে প্রথম দিকে কনফার্ম করা টিকিট বাতিল করা হয়েছে।
কারণ বাড়ি ভাড়া না করে হজযাত্রী পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই। এ কারণে অনেক হজ যাত্রী ভিসা পেয়েও যেতে পারছেন না।
গতকাল আশকোনা হজ ক্যাম্পে কথা হয় ঠাকুরগাঁও থেকে আসা হজযাত্রী ইব্রাহিমের সাথে। তিনি বলেন, আমাদের ভিসা হয়েছে। কিন্তু ফ্লাইট কবে তা জানি না। তাদের এজেন্সি রিলেশন ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস কিছু লোক নিয়ে আগেই চলে গেছে। এখন আমরা হজ ক্যাম্পে দুই দিন ধরে ঘুরেও ফ্লাইটের ব্যাপারে জানতে পারছি না।
ঢাকা-দোহা রুটের ৫টি ফ্লাইট বাতিল : হজযাত্রী পরিবহনের সমস্যা সমাধানের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঢাকা-দোহা রুটের পাঁচটি ফ্লাইট বাতিল করেছে। এ ছাড়া ঢাকা-লন্ডন রুটের একটি করে ফ্লাইট কমানো হয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, শেষ সময়ে হজযাত্রী পরিবহনে অতিরিক্ত বিমানের প্রয়োজন। এ জন্য ২৬ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা-দোহা ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা-লন্ডন রুটে সপ্তাহে চারটির পরিবর্তে তিনটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। ফলে এ ফ্লাইট দিয়ে রুটের পরিবর্তে হজযাত্রী বেশি পরিবহন সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে হজ ক্যাম্পের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি খারাপ আমরা সবাই জানি। তবে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ জটিল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব।
বর্তমান সঙ্কট নিয়ে হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাবের মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, সবাই মিলে চেষ্টা চলছে। এ পরিস্থিতি থেকে যেকোনোভাবে উত্তরণ প্রয়োজন।